QUICK OVERVIEW:
4 Night's 3 Day's
বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়ঃ
১- একটি ভ্রমন পিপাসু মন থাকতে হবে।
২- ভ্রমনকালীন যে কোন সমস্যা নিজেরা আলোচনা করে সমাধান করতে হবে।
৩- ভ্রমন সুন্দরমত পরিচালনা করার জন্য সবাই আমাদেরকে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন আশা রাখি।
৪- আমরা শালীনতার মধ্য থেকে সর্বোচ্চ আনন্দ উপভোগ করব।
৫-অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যে কোন সময় সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে, যেটা আমরা সকলে মিলেই ঠিক করব।
৬- বাংলার অভিযাত্রী ইকো টুরিজম এ বিশ্বাসী, টুরে যেয়ে প্রকৃতির কোন রকম ক্ষতি আমরা করবনা। কোন অপচনশীল বর্জ্য যেমন প্লাস্টিক প্যাকেট, বোতল যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলব ও ক্ষেত্রবিশেষে সাথে করে নিয়ে আসব। স্থানীয় জনবসতির সাথে বন্ধুত্বপূণ আচরন করব এবং যথোপযুক্ত সস্মান প্রদর্শন করব।
৭- কোন প্রকার মাদক দ্রব্য বহন বা সেবন করা যাবে না।
একঘেয়েমি ক্লান্ত কর্মময় জীবন থেকে ছুটি নিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারেন সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবনে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এ ম্যানগ্রোভ বনে গাঢ় সবুজের সমারোহ। শুধু সবুজ আর সবুজের মেলা। বঙ্গোপসাগর থেকে ছুটে আসা জলভেজা লবণাক্ত বাতাস, সে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিশ্বের সেরা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট প্রকৃতির রহস্যঘেরা সুন্দরবন। সারি সারি সুন্দরী, পাশেই থাকে কেওড়া আর গেওয়া যেন না দেখলেই মিস হয়ে যাবে এবং গোলপাতা গাছ গুলো যেন দৃষ্টি কারে। দৃষ্টি যতদূর যায় সব খানেই যেন কোন শিল্পী সবুজ অরণ্য তৈরি করে রেখেছেন। অপরূপ চিত্রা হরিণের দল, বন মোরগের ডাক, বানরের চেঁচামেচি, মৌমাছির গুঞ্জন, বন শূকর, বিভিন্ন রং বে-রং এর পাখি, নদিতে কুমির ও বিভিন্ন ধরনের মাছের খেলা ও বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গর্জন। টেলিভিশনের পর্দায় নয়, ভ্রমণপ্রিয় মানুষ এখন ইচ্ছা করলে যে কোন সময় নিরাপদে ঘুরে আসতে পারেন সুন্দরবন। সুন্দরবন বিশ্বের অনন্যতম এক প্রাকৃতিক সম্পদ। আপনার হয়তো দেশ বিদেশের অনেক স্থানেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রয়েছে কিন্তু সুন্দরবন ভ্রমণ আপনাকে দেবে ভ্রমণের ভীন্নতর রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতা। কারণ, এখানে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বনের নীরবতা, মায়াবী হরিণের মনোরম দূরন্তপনা, পাখির কলকাকলী, বন্য শূকর ও বানরের স্বাধীনচেতা বিচরণ, কুমিরের শান্ত অথচ লোমহর্ষক অবস্থান দর্শন আর বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংস্পর্শে আসার রোমাঞ্চকর সব অনুভূতি।
মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে সামান্য দূরে পশুর নদীর তীরে ৩০ হেক্টর জমির ওপর বন বিভাগের আকর্ষণীয় একটি পর্যটক কেন্দ্র। একদিনে সুন্দরবন ভ্রমণ এবং সুন্দরবন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নেওয়ার জন্য করমজল হচ্ছে সবচেয়ে উপযুক্ত ও আকর্ষণীয় স্থান। মংলা সমুদ্রবন্দরের খুব নিকটবর্তী হওয়ায় মংলা ফরেস্ট অফিস থেকে মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে করমজল পরিদর্শন করে ফিরে আসা যায়। করমজল কে সুন্দরবনের মডেল হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী ভ্রমণে আসেন অধিক সংখ্যক দর্শনার্থী ভ্রমণ করার কারণে সুন্দরবনের মধ্যে আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে করমজল সর্বোচ্চ স্থানে পরিণত হয়েছে। এখানে দেখা মিলবে হরিণ কুমির বানর পাখি এছাড়াও কাঠের ব্রিজ টাওয়া, নৌকা চালনা, পশুর নদী, বিদেশি জাহাজ, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য ইত্যাদি এবং বাংলাদেশের একমাত্র কুমির প্রজনন কেন্দ্র করমজলে অবস্থিত যা পর্যটকদের দারুন ভাবে আকর্ষণ করে।
সুন্দরবনের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত কটকা সমুদ্র সৈকত সুন্দরবনের আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। মংলা বন্দর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং সুন্দরবন পূর্বে আকর্ষণীয় জায়গার মধ্যে প্রধান কেন্দ্র। এখানে বনবিভাগের একটি রেস্ট হাউজ ও আছে রেস্টহাউজের সামনে দেখা যায় সাগরের অথৈ জল রাশির বিশাল বিশাল ঢেউ এবং এর আশে পাশে রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় খাল এসব খালে নৌকা নিয়ে ভ্রমণ খুবই আনন্দদায়ক। প্রকৃতির রূপ ও বিচিত্র রহস্য, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য অপূর্ব সুযোগ। খালের ধারে দেখা যায় দলে দলে চিত্রল হরিণ চরে বেড়াতে। এছাড়াও বানর, উদবিড়াল, বন মোরগ, বিভিন্ন পাখি ও বিভিন্ন পশু দেখা যায়। মাঝে মাঝে বাঘের গর্জনও শোনা যায় আর অন্ধকার রাতে লক্ষ কোটি জোনাকির আলোর মেলা মুগ্ধ করে তোলে সব মিলিয়ে কটকা একটি সৌন্দর্য উপভোগ্য স্থান।
কচিখালি মংলা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এটি কটকার পাশাপাশি একটি জনপ্রিয় আকর্ষণের স্থান সমুদ্র সৈকত এর প্রধান আকর্ষণ। এখানে আছে পূর্ব-পশ্চিমে আনুমানিক তিন কিলোমিটার বিস্তৃত সী বীচ। কচিখালীতে আরো আছে বন বিভাগের নিজস্ব রেস্ট হাউজ চাইলে পর্যটকগণ ভাড়া হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। আরো আছে কোস্ট গার্ডের অস্থায়ী টহল অফিস। কটকার জামতলা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে কচিখালি সমুদ্র সৈকত হয়ে বন বিভাগের কচিখালি স্টেশন পর্যন্ত পায়ে হাঁটার পথ এ পথের পাশে ঘন অরণ্য মধ্যে দেখা যায় বাঘ, হরিণ, শুকর, বানর, বিষ ধর সাপ ইত্যাদি এই স্থানে চলতে গেলে সাধারণত একটু ভয় ভয় মনে হবে কিন্তু দুঃসাহসী পর্যটকদের জন্য খুব মনমুগ্ধকর ও আকর্ষণীয়।
মংলা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার এবং খুলনা থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিনে অবস্থিত এটি সুন্দর বনের দক্ষিণ অভয়ারণ্যের একটি বিখ্যাত প্রশাসনিক কেন্দ্র। নীলকমল কে সবাই হিরণ পয়েন্ট বলে ও জানে। যেহেতু এখানে জঙ্গল বেশি সে কারণে এখানে হরিণ ও বেশি থাকায় এখানকার নাম হিরণ পয়েন্ট নামে পরিচিতি লাভ করে। হরিণ বেশি থাকায় এখানে বাঘের আনাগোনা একটু বেশি তাছাড়াও দেখা মিলবে বন্য শুকর বানর উদবিড়াল বিভিন্ন প্রজাতির সাপ নানা বর্ণের পাখির ঝাঁক ইত্যাদি এর সামনে দিয়ে বয়ে গেছে একটি ছোট স্রোতস্বিনী খাল খালের দক্ষিনে অবস্থিত নৌ ক্যাম্প, ফরেস্ট অফিস, রেস্ট হাউজ আর উত্তর পাশে বিকেল বেলা হরিণ আর বানরের পাল বিচরণ করে সে দৃশ্য খুবই মনমুগ্ধকর। ১৯৯৭ সালে ঘোষিত ৫২২ তম সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের ফলক এখানেই উন্মোচন করা হয়। এখানে বন বিভাগের একটি রেস্ট হাউজ আছে এ রেস্ট হাউসে পর্যটকদের থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে।
জামতলা সৈকত প্রায় ৩ কিলোমিটার ঘন সুন্দরী, গেওয়া, গড়ান এবং কেওড়ার বন পেরিয়ে জামতলা সৈকতে যেতে হয়। জামতলা সমুদ্র সৈকতের পথে শুধু ম্যানগ্রোভ বনই নয় বেশ খানিকটা ফার্ণের ঝোপও পেরুতে হয়। পথে রয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। যেখান থেকে বিস্তীর্ণ ছনক্ষেতে হাজার হাজার হরিণের ছোটাছুটি আবার কখনও রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখা যেতে পারে। কচিখালী আর কটকার ঠিক মধ্যবর্তী স্থানের নাম বাদামতলা। বাদামতলা অত্যন্ত নির্জন এক সমুদ্র সৈকত। হরিণ, শূকর, বিষধর সাপ ইত্যাদির এক ছমছম পরিবেশ যা দুঃসাহসী পর্যটকদের জন্য মনোমুগ্ধকর। সৈকতটিতে প্রায়ই বাঘের অনাগোনা দেখা যায়।
বঙ্গোপসাগরের তীরভূমী জুড়ে প্রায় ৮ কিলোমিটার লম্বা এক নয়নাভিরাম বালকাময় সমুদ্র সৈকত এখানে একই সাথে বন এবং সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।মান্দারবাড়িয়ার একদিকে সুন্দরবন অপরদিকে বঙ্গোপসাগরের মায়াবী জলরাশির অবিশ্রান্ত গর্জন যে কোন মানুষকেই দেবে অনির্বচনীয় আনন্দ। মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত প্রকৃতির অপরূপা সুন্দরবন ও উত্তাল বঙ্গোপসাগরের এক রূপসী কন্যা-যা এখনও কিছুটা অনাবিস্কৃত এবং অস্পর্শিত। এখানে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত।
দুবলারচর সুন্দরবনের দক্ষিণে কটকার দক্ষিণ পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত একটি দ্বীপ বা চর। হিন্দু ধর্মের পূন্যস্ন্যান রসমেলা এবং হরিণের জন্য বহুল পরিচিত। এটি কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে একটি বিচ্ছিন্ন চর, এই চরের মোট আয়তন ৮১ বর্গমাইল। দুবলারচরটি মূলত একটি জেলেদের গ্রাম, এখানে মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুটকি শোকানের কাজ। এছাড়াও প্রতি বছর কার্তিক (নভেম্বর) মাসে হিন্দু ধর্মালবম্বীদের রাস মেলা এবং পূর্ণ স্নানের জন্য দ্বীপটি বিখ্যাত। প্রতিবছর অসংখ্য পূর্ণার্থী রাস পূর্ণিমাকে উপলক্ষ করে এখনে সমুদ্র স্নান করতে আসেন। এবং রাস মেলা চলাকালিন স্থানীয় লোকজন ছাড়াও দুর-দুরান্ত থেকে এমনকি বিদেশি পর্যটকারও স্বতঃস্ফ্রতভাবে অংশ নিয়ে থাকেন।